বাংলাদেশে জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য (এমপি) আটক হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।যাদের প্রত্যেকের ঠাঁই হয়েছে দেশের বিভিন্ন কারাগারে।
৫ই আগস্টের আগে ক্ষমতার চূড়ায় থাকা তুমুল ব্যস্ত, প্রটোকলে ঘেরা এ সকল সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা এখন অলস সময় পার করছেন কারাগারে শুয়ে-বসে। তাদেরই একজন হলেন আন্দোলনের সময় দিনের পর দিন মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কারিগর সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দী রয়েছেন তিনি।
কাশিমপুরের হাইসিকিউরিটি এই কারাগারে প্রতিটি আসামির জন্য পৃথক পৃথক সেল রয়েছে। তবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে অন্যান্য সাধারণ বন্দিদের চেয়ে বাড়তি কিছু সুযোগ-সুবিধা (ডিভিশন সুবিধা) পাচ্ছেন পলক। ডিভিশন অনুযায়ী কারা আইনে যা যা পাওয়ার কথা সেগুলোই ভোগ করছেন পলক।একাই রয়েছেন পৃথক এক সেলে, তাকে সেবার জন্য একজন বন্দিও আছেন। এছাড়াও খাট, চেয়ার-টেবিল, পত্রিকা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধাও পাচ্ছেন তিনি।
এরপরও সম্প্রতি পলক এবং তার আইনজীবী শুনানিকালে আদালতে অভিযোগ তোলেন যে ডিভিশন অনুযায়ী কারাগারে সংশ্লিষ্ট সব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি এ-ও দাবি করা হয় যে কারাগারে পলককে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া কয়েদিদের সাথে রাখা হচ্ছে এবং ৫ হাত লম্বা ও ৪ হাত চওড়া সেলে তাকে রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎসহ ফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না। কারাগারটিতে বেশিরভাগ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে তাকে রাখা হয়েছে। পলক ও তার আইনজীবীর এমন অভিযোগ নাকচ করে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছেন, ডিভিশন অনুযায়ী একজন বন্দির যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা, তার সবগুলো সুবিধাই পাচ্ছেন পলক।
এ বিষয়ে কারা কর্মকর্তারা বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পেয়ে থাকেন সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিআইপি ও সরকারি কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ডিভিশন সুবিধার জন্য যেকোনো বন্দি নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি কোনো বন্দির ডিভিশন সুবিধার আবেদন মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় তখন সেই বন্দি ডিভিশন সুবিধা পেয়ে থাকেন। যারা ডিভিশন পেয়ে থাকেন তাদের আলাদা কক্ষ বা সেলে রাখা হয়। সেখানে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল, চেয়ারসহ বাড়তি কিছু সুবিধা দেওয়া হয়। তাদের খাবারের পদেও রয়েছে সাধারণ বন্দির চেয়ে কিছুটা ভিন্নতা। ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারী (বন্দিদের মধ্যে থেকে) দেওয়া হয়। তারা সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন। এ ছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার যাচাই-বাছাই করে তাদের দিয়ে থাকে কারা কর্তৃপক্ষ।