মালদ্বীপের পার্লামেন্টে সরকারি এবং বিরোধী দলীয় এমপিদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা গড়িয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষে। গতকাল রোববার মন্ত্রিসভায় নতুন চার মন্ত্রীর অনুমোদনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বিতর্ক গড়ায় হাতাহাতিতে। পার্লামেন্টের ভেতর কিল-ঘুষি-লাথিতে জড়ান সরকারি এবং বিরোধী দলীয় এমপিরা। যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
মালদ্বীপের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর মন্ত্রিসভায় চার সদস্যের সংসদীয় অনুমোদন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় পার্লামেন্টে বিরোধী দল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি)। এরপরেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।
ক্ষমতাসীন পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) এবং মালদ্বীপ প্রগ্রেসিভ পার্টির (পিপিএম) সদস্যরা এর প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ শুরু করে এবং পার্লামেন্টের অধিবেশন চলতে বাধা দেয়। বিশেষ অধিবেশনে বক্তৃতা থেকে বিরত রাখতে স্পিকারের পাশে খেলনা বাঁশি ফুঁকে কার্যক্রম বিঘ্নিত করতে দেখা গেছে সরকারি সংসদ সদস্যদের।
পার্লামেন্টের ভেতরে করা ভিডিওতে দেখা গেছে যে, কান্দিথিমুর এমপি আবদুল্লাহ শাহীম আবদুল হাকিম ঘুষি মেরে কেন্দিকুলহুধুর এমপি আহমেদ ইসা মাটিতে ফেলে দিয়েছেন। এরপর এই দুই এমপিকে হাতাহাতি করতে দেখা যায়। হাতাহাতির একপর্যায়ে দুই সংসদ সদস্যই চেম্বারের কাছে পড়ে গেলে আবদুল হাকিম মাথায় আঘাত পান। চিকিৎসার জন্য তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রোববারই সংবাদ সম্মেলনে করে এমডিপি বলেছে, আবদুল্লাহ শাহীম আবদুল হাকিম আত্মরক্ষার্থেই হাতাহাতিতে জড়িয়েছিলেন। এমডিপির সংসদ সদস্য হিসান হুসাইন বলেন, সরকার সমর্থিত এমপিরা যা করেছেন তাতে এমডিপি এমপিদের কাছে আত্মরক্ষা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।
আরেক সংসদ সদস্য হাসান জারির এমডিপির একজন সদস্যের হামলায় আঙুলে আঘাত পেয়েছেন। সংঘর্ষের সময় যাতে সংসদ সদস্যরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারেন সে জন্য পার্লামেন্টে বসানো মাইক্রোফোনগুলো খুলে নেওয়া হয়।
ক্ষমতাসীন পিপিএম এবং পিএনসি জোট এক বিবৃতিতে বলেছে যে, মোহাম্মদ মুইজ্জুর মন্ত্রিসভার অনুমোদন অস্বীকার করাকে সরকার নাগরিকদের যে পরিষেবাগুলো দেয় তাতে বাধা দেওয়ার সমান বলে বিবেচিত হবে।
বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে, মন্ত্রীদের কাজ করার সুযোগ না দিয়ে এবং তাদের কর্মক্ষমতা বিচার না করে সংসদীয় অনুমোদন অস্বীকার করা সরকার পরিচালনায় সহযোগিতার অভাবকে প্রকাশ করছে। সে সঙ্গে, নাগরিকদের যে পরিষেবাগুলো প্রদান করা হয় তার ওপর এমন আচরণ সরাসরি বাধা।’
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য এ পর্যন্ত ১৮ জন সদস্য সংসদীয় অনুমোদন লাভ করতে পেরেছেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল আহমেদ উশাম, আবাসন মন্ত্রী আলী হায়দার, ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ শাহীম আলী সাইদ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ সাঈদ সংসদের অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিলেন।
সংঘর্ষের পর ক্ষমতাসীন জোটের সদস্য ও সমর্থকেরা সংসদের বাইরে মন্ত্রীদের অনুমোদনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। স্পিকার মোহাম্মদ আসলাম ও ডেপুটি স্পিকার আহমেদ সেলিমের বিরুদ্ধেও অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে জোট।